Facebook

6/recent/ticker-posts

মৃত্যুর পর মানুষের দেহে কী ঘটে? একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ



মৃত্যুর পর মানুষের দেহে কী ঘটে? একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ



সূচিপত্র:

  1. মৃত্যু কী?
  2. ব্রেইনের অবস্থা
  3. হৃদযন্ত্র বা হার্ট
  4. কিডনির অবস্থা
  5. পাকস্থলীর ভাঙন
  6. শরীরের তাপ ও বায়ু কোথায় যায়
  7. আত্বা বা চেতনার প্রশ্ন
  8. পুনর্জন্ম: বিজ্ঞান কী বলে?
  9. উপসংহার

1. মৃত্যু কী?

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মৃত্যু হল একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার সমাপ্তি, যেখানে শরীরের কোষগুলোর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে থেমে যায়। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, মস্তিষ্ক আর সংকেত পাঠায় না এবং শরীর ধীরে ধীরে বিশ্লিষ্ট হতে থাকে।


2. ব্রেইনের অবস্থা মৃত্যুর পরে

মস্তিষ্ক মানুষের শরীরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। মৃত্যুর পর এটি ধাপে ধাপে ভেঙে পড়ে:

  • ১-২ মিনিটের মধ্যে: অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হলে নিউরনগুলো মারা যেতে শুরু করে।
  • ৫-১০ মিনিট: অধিকাংশ কোষ মৃত হয়ে যায়।
  • ১-৩ ঘণ্টা: ব্রেইন টিস্যু নরম হয়ে যায়, এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে দ্রবীভূত হতে শুরু করে।
  • বিস্তরণ: ব্রেইনের তরল অংশ লিক হতে পারে, মাথার খুলিতে চাপ বাড়ে।

3. হৃদযন্ত্র বা হার্ট

হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে রক্তচলাচল থেমে যায়। এর ফলে:

  • কোষে অক্সিজেনের অভাব হয়।
  • ৩০ মিনিটের মধ্যে হৃদপিণ্ডের কোষগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
  • কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হার্টও অন্যান্য অঙ্গের মত বিশ্লিষ্ট হতে শুরু করে।

4. কিডনির অবস্থা

কিডনি রক্ত পরিশোধন করে, কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়:

  • কিডনি টিস্যুতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়।
  • ১-২ ঘণ্টার মধ্যে কোষগুলো নষ্ট হতে থাকে।
  • কিডনি থেকে শরীরে টক্সিন ছড়ায়, যা পচনের গতি বাড়ায়।

5. পাকস্থলী ও হজমতন্ত্র

মৃত্যুর পর হজমতন্ত্রের কার্যক্রমও থেমে যায়, তবে ব্যাকটেরিয়া এখানে সক্রিয় থাকে:

  • পাকস্থলীর এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়া নিজের শরীরকেই ভাঙতে শুরু করে (Autolysis)।
  • অন্ত্রের গ্যাস জমে পেট ফুলে যায়।
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র গন্ধ ও রং পরিবর্তন হয়।

6. শরীরের তাপ ও বায়ু কোথায় যায়?

  • তাপ: মৃত্যুর পর শরীর "Algor Mortis" অবস্থায় যায়, অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে আশপাশের তাপমাত্রার সমান হয়ে আসে। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে।
  • বায়ু: জীবিত অবস্থায় দেহে থাকা বাতাস (ফুসফুস, অন্ত্র) মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়। অন্ত্রে জমে থাকা গ্যাস পচনের সময় বাইরে আসে।

7. আত্মা বা চেতনার প্রশ্ন: বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি

বিজ্ঞান আত্মার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারেনি। মস্তিষ্কই চেতনার উৎস, এমনটা আধুনিক নিউরোসায়েন্স বলে:

  • চেতনা হল নিউরোনগুলোর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ও কেমিক্যাল কমিউনিকেশনের ফলাফল।
  • মস্তিষ্ক মারা গেলে সেই চেতনা আর থাকে না। আত্মা নিয়ে গবেষণা হয়নি বললেই চলে।

কিছু গবেষক "Near Death Experience" নিয়ে কাজ করেছেন, তবে সেগুলো নিশ্চিত প্রমাণ নয়।


8. পুনর্জন্ম: বিজ্ঞান কী বলে?

পুনর্জন্ম বা পুনরায় জন্ম গ্রহণ ধর্মীয় বিষয়, তবে বিজ্ঞান কী বলে?

  • DNA ও জেনেটিক তথ্য: জীবিত কোষ ধ্বংস হয়ে গেলে পুনর্জন্ম সম্ভব নয়।
  • মস্তিষ্কের স্মৃতি: কোনো মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্ক বা স্মৃতি হুবহু অন্য কারো মধ্যে স্থানান্তর হয়নি।
  • বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: পুনর্জন্মের কোনো প্রমাণ নেই। কিছু ঘটনা যেমন Déjà Vu বা past life regression, সেগুলো মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় বেশি বোঝানো যায়।

তবে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কিছু তত্ত্বে চেতনার পুনরাবৃত্তির চিন্তা থাকলেও, সেগুলো এখনো পর্যাপ্তভাবে পরীক্ষিত নয়।


9. মৃত্যুর ধাপসমূহ সংক্ষেপে:


10. উপসংহার:

বিজ্ঞান বলছে, মৃত্যু একটি প্রাকৃতিক ও অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়া। মস্তিষ্ক, হৃদয়, কিডনি, পাকস্থলী সহ সব অঙ্গ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। শরীরের তাপ এবং বাতাস ঘন ঘন পরিবর্তিত হয়, এবং চেতনা চিরতরে হারিয়ে যায়। আত্মা বা পুনর্জন্মের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো অনুপস্থিত। এটাই মানব জীবনের শেষ ধাপ, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে।


Post a Comment

0 Comments