6/recent/ticker-posts

রেডিয়েশন কী? মোবাই নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে? কম বেশির প্রভাব



  1. রেডিয়েশন কী
  2. মোবাইল নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে
  3. রেডিয়েশনের কম-বেশির প্রভাব

রেডিয়েশন কী?

রেডিয়েশন (Radiation) শব্দটির অর্থ হল বিকিরণ বা নির্গমন। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শক্তি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই শক্তি বিভিন্নভাবে পরিবাহিত হতে পারে – যেমন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, পারমাণবিক বিক্রিয়া, অথবা তাপীয় বিকিরণ।

রেডিয়েশন প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে:

  1. আয়নাইজিং রেডিয়েশন (Ionizing Radiation):
    এই রেডিয়েশন এতটাই শক্তিশালী যে এটি কোনো কণার ইলেকট্রন ছিঁড়ে ফেলতে পারে। যেমন: গামা রে, এক্স-রে, আলফা ও বিটা কণা ইত্যাদি।

    • এটি মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
    • ডিএনএ-তে ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন (Non-Ionizing Radiation):
    এই ধরনের রেডিয়েশন ইলেকট্রন ছিঁড়ে ফেলতে পারে না। যেমন: রেডিও ওয়েভ, মাইক্রোওয়েভ, ইনফ্রারেড রে, মোবাইল রেডিয়েশন ইত্যাদি।

    • তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, তবে দীর্ঘ সময় বা অতিরিক্ত এক্সপোজারে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

মোবাইল ফোন, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ ইত্যাদি ডিভাইস নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন নির্গত করে। এ কারণে এই রেডিয়েশন নিয়ে নানা গবেষণা ও বিতর্ক রয়েছে।


মোবাইল নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে?

মোবাইল নেটওয়ার্ক একটি জটিল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করা যায়:

১. মোবাইল ফোন থেকে সিগনাল পাঠানো:

আপনি যখন কাউকে কল করেন বা ইন্টারনেটে প্রবেশ করেন, আপনার ফোন একটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কাছাকাছি থাকা একটি মোবাইল টাওয়ারে (বা সেল টাওয়ারে) সিগনাল পাঠায়।

২. সেলুলার টাওয়ার:

প্রতিটি টাওয়ার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল কভার করে, যাকে বলে "সেল" (cell)। এই সেল গুলো পরস্পর সংযুক্ত হয়ে একটি বড় নেটওয়ার্ক গঠন করে।

  • সিগনাল টাওয়ার প্রথমে আপনার তথ্য গ্রহণ করে এবং তা মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের সার্ভারে পাঠায়।

৩. BTS এবং MSC:

  • BTS (Base Transceiver Station): এটি মোবাইল ফোনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে।
  • MSC (Mobile Switching Center): এটি কল রাউট করে, অর্থাৎ কোন নম্বর কোথায় যাবে, কোন টাওয়ার ব্যবহার হবে তা নির্ধারণ করে।

৪. তথ্য গন্তব্যে পৌঁছানো:

আপনার তথ্য (ভয়েস, ভিডিও, ডেটা) গন্তব্য ফোন বা সার্ভারে পৌঁছে যায়, এবং একইভাবে বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে।

৫. টাওয়ার থেকে টাওয়ার হ্যান্ডওভার:

যখন আপনি চলন্ত অবস্থায় কথা বলেন (যেমন গাড়িতে বসে), তখন আপনার ফোন এক টাওয়ার থেকে আরেক টাওয়ারে হস্তান্তর হয় – এটিকে বলে হ্যান্ডওভার।

নেটওয়ার্কের ধরন:

  • 2G: শুধু ভয়েস কল ও SMS
  • 3G: ভয়েস + ধীরগতির ইন্টারনেট
  • 4G: HD ভিডিও, ফাস্ট ইন্টারনেট
  • 5G: আল্ট্রা ফাস্ট ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস কানেক্টিভিটি

রেডিয়েশনের প্রভাব (কম-বেশি হলে কী হয়)

১. মানবদেহের ওপর প্রভাব:

কম রেডিয়েশন:

  • শরীর সাধারণত সহ্য করতে পারে
  • মোবাইল ফোনের মতো ডিভাইস থেকে কম মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয়, যা সীমিত ব্যবহারে তেমন ক্ষতিকর নয়

বেশি রেডিয়েশন:

  • মাথাব্যথা, নিদ্রাহীনতা, একাগ্রতা হ্রাস
  • দীর্ঘমেয়াদে টিউমার, ক্যান্সার সম্ভাবনা
  • শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে

২. পরিবেশের ওপর প্রভাব:

  • পাখি, বিশেষ করে মৌমাছি, কাক, চড়ুই ইত্যাদি রেডিয়েশনের কারণে দিকভ্রান্ত হয় এবং মারা যায়
  • উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটায়

৩. ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ওপর প্রভাব:

  • অত্যাধিক রেডিয়েশন অন্য যন্ত্রের সিগনালে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে (যেমন পেসমেকার, বিমান চালনার যন্ত্রপাতি)

৪. মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব:

  • অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার ও রেডিয়েশন একসঙ্গে মানসিক অবসাদ, একাকীত্ব ও মেজাজ খারাপ করতে পারে

রেডিয়েশন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়:

  1. মোবাইল ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলা এড়িয়ে চলা
  2. ইয়ারফোন বা স্পিকারফোন ব্যবহার করা
  3. রাতের বেলা মোবাইল দূরে রাখা বা ‘এয়ারপ্লেন মোড’ অন করা
  4. ছোট শিশুকে মোবাইল থেকে দূরে রাখা
  5. Wi-Fi রাউটার দূরে রাখা

উপসংহার:

রেডিয়েশন আমাদের আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন, টাওয়ার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমাদের জীবন সহজ করেছে, কিন্তু এর নেতিবাচক দিকও উপেক্ষা করার মতো নয়। সঠিক ব্যবহার, সচেতনতা ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

Post a Comment

0 Comments